ব্রেন টিউমারের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি

জানতে চান ব্রেইন টিউমার/ক্যান্সারের কারণ ?? বাঁচতে চান ব্রেইন ক্যান্সার থেকে ? তবে সময় নষ্ট না করে চলুন  জেনে নেয়া যাক আসলে ব্রেইন টিউমার/ক্যান্সার কি ? পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে পড়লে আমরা আরও জানতে পারব  ব্রেইন টিউমার বা ক্যান্সার এর আসল কারণ,লক্ষণ ও তার চিকিৎসা পদ্ধতি,,,,,

ব্রেইন টিউমার কি :

মস্তিষ্কের মধ্যে কোন কোষের বা মাংসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়াকে ব্রেইন টিউমার বলা হয়। তবে সব ব্রেইন টিউমার ব্রেইন ক্যান্সারে রূপ নেয় না।

ব্রেইন ক্যান্সার দুই ধরনের হতে পারে-

  1. বিনাইন (ক্যান্সারবিহীন) : এটি নিম্ন শ্রেণির চিকিৎসার পর সেরে যায়।
  2. মালিগন্যান্ট (ক্যান্সারযুক্ত) : এটি উচ্চ শ্রেণির। মস্তিষ্কের মধ্যে সৃষ্ট হয় এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়।

তবে ব্রেইন ক্যান্সারের স্থান এবং বৃদ্ধির হার নির্ধারণ করে স্নায়বিক পদ্ধতির ক্রিয়ার ওপর।শিশুদের ক্ষেত্রেও কিন্তু ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে। শিশুদের যেসব ক্যান্সার হয়, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মস্তিষ্কের ক্যান্সার। সাড়ে ছয় বছরের শিশুদের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সারের হার বেশি। এ ছাড়াও মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে এ ধরনের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তাই শিশুরা মাথা ব্যথার কথা বললে, তা কখনো উপেক্ষা করবেন না।

ব্রেইন ক্যান্সার যে সব কারণে হতে পারে-

যদিও ব্রেইন ক্যান্সারের কারণগুলো অজানা এবং অনির্দিষ্ট। তবে বেশ কিছু কারন ব্রেইন ক্যান্সারের সঙ্গে যুক্ত। যেমন-

  • বয়সের সঙ্গে ব্রেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
  • ক্যান্সারের পূর্ববর্তী ইতিহাস আছে এমন শিশুদের মধ্যে পরের জীবনে ব্রেইন ক্যান্সার বাড়ার একটি সর্বাধিক ঝুঁকি রাখে।
  • লিউকিমিয়ার রোগীদের ব্রেইন ক্যান্সার বৃদ্ধি পাওয়ার সর্বাধিক ঝুঁকি আছে।
  • কিছু জন্মগত ত্রুটির কারণেও ব্রেইন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
  • রেডিয়েশন : মোবাইল এবং কম্পিউটার হতে নির্গত তেজস্ক্রিয় তরঙ্গ অথবা যে কোন ভাবেই তেজস্ক্রিয় তরঙ্গের সংস্পর্শে আসলে ব্রেইন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • আঘাতঃ বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ভাবে মাথায় অতিরিক্ত আঘাত পেলে অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সার কোষ সক্রিয় হয়ে যেতে পারে অথবা পূর্বে বিদ্যমান টিউমারের আকৃতিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • বিভিন্ন কেমিক্যালের ব্যবহার : দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কেমিক্যাল অথবা হেয়ার কালার মাথায় ব্যবহার করলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • জন্মগত কারণঃ ভ্রূণের উন্নয়নের সময় একটোপিক প্রিমিটিভ সেল বা করোটি গহ্বর থেকে যায় এবং এর বর্ধন প্রক্রিয়ার বিভিন্নতার কারণে জন্মগত ভাবেও মস্তিষ্কের ক্যান্সার হতে পারে।
  • বংশগত কারণঃ অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি পরিবারে পিতা-মাতার কারো ক্যান্সার ছিল এবং ভবিষ্যতে তারও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং জেনেটিক্যাল কারনেও ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে।

ব্রেইন ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো সবার ক্ষেত্রে একই রকম হয় না। তবে কিছু কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো প্রকাশ পেলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।যেমন :

  1. মাথাব্যথা :ব্রেইন ক্যান্সারের অন্যতম একটি লক্ষণ হল প্রচন্ড মাথা ব্যথা।এজন্যই দীর্ঘদিন ধরে মাথাব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকলে হেলাফেলা না করে বরং দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। তবে সাধারণ সমস্যা ভেবে অনেকেই আমরা এড়িয়ে যাই বিষয়টিকে।।মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ার কারণে এই ব্যথা হয়ে থাকে। ঘন ঘন তীব্র মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। সাধারণত পেইন কিলার এই ব্যথা দূর করতে ব্যর্থ হয়।
  2. এছাড়াও প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভোর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং ঘুম যত গভীর হয় মাথা ব্যথাও ততো বাড়ে।
  3. মৃগী রোগ : অপ্রাপ্ত বয়সে মৃগী রোগ দেখা দিলে এবং সাথে মানসিক ভারসাম্যহীনতা বা অন্য কোন অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই বুঝতে হবে এটি ব্রেইন ক্যান্সার।
  4. চোখের সমস্যা : চোখে ঝাপসা দেখা, বিভিন্ন বস্তু এবং রং চিহ্নিত করতে সমস্যা হয়ে থাকে ব্রেন টিউমার আক্রান্ত রোগীর। মূলত অপটিক্যাল লোব টিউমার আক্রান্ত হলে এই ধরণের সমস্যা হতে দেখা দেয়। এছাড়াও চোখ অতিরিক্ত কাঁপা বা চোখের পাতা বন্ধ করতে অসুবিধা হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  5.  বমি বমি ভাব : পেটে ব্যথা ছাড়া বা বমনেচ্ছা ছাড়াই বমি হতে পারে এবং খাবারের সাথে বমির কোন সম্পর্ক থাকে না। মাথা ব্যথা থাকাকালীন সময়েও বমি হতে পারে।
  6. ব্রেইন ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হল ঘ্রাণশক্তি হ্রাস পাওয়া, কোন কিছুই কল্পনা করতে না পারা।
  7. ব্রেইন ক্যান্সারের কারনে শ্রবণশক্তিও হ্রাস পায়।
  8. শরীরের আকারে অস্বাভাবিক পরিবর্তন চলে আসে।

ব্রেইন টিউমার/ক্যান্সারের চিকিৎসা : ব্রেইন টিউমারের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রণালী সাধারণত টিউমারটির আকার, অবস্থান, প্রকার ও বর্তমান অবস্থার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়।ব্রেইন টিউমার পরবর্তীতে ব্রেইন ক্যান্সার নামেও পরিচিত হয়।

রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং পছন্দের চিকিৎসা পদ্ধতির ওপরও সমপরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিনাইন বা ক্যান্সার বিহীন টিউমারের ক্ষেত্রে প্রধানত সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে টিউমার বাদ দেবার প্রণালীই ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসায় ডাক্তারদের প্রাথমিক পরামর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমারের ক্ষেত্রে সার্জারি ছাড়াও কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং অন্যান্য প্রণালীর মাধ্যমেও এই চিকিৎসা হয়ে থাকে।নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি হল ব্রেইন টিউমার চিকিৎসার সর্বাধিক প্ৰচলিত পদ্ধতি:

সার্জারি :

ব্রেইন টিউমারের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকেরা সর্বপ্রথম টিউমারটি অপারেশন করে বাদ দেবার পরামর্শই দিয়ে থাকেন।ছোট আকারের টিউমার, যেগুলি কম জটিল অংশে অবস্থান করে, সেগুলি অপারেশন করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। কিন্তু যদি টিউমারটি আকারে বড় হয়, বা মস্তিষ্কের কোনো জটিল স্থানে থেকে থাকে, তবে তা অপারেশন করা অপেক্ষাকৃত কঠিন।

এই ধরণের জটিল অপারেশনে অনেক ক্ষেত্রেই অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, যেমন দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ইত্যাদি। যাই হোক, স্নায়ু বিশেষজ্ঞ বা নিউরোসার্জেনরা চেষ্টা করেন যতটা সম্ভব টিউমার বাদ দেবার।বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাযুক্ত হাসপাতালগুলি জটিল ব্রেইন টিউমার অপারেশনের জন্য আধুনিক রোবোটিক সার্জারির সাহায্য নেন। এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের গভীরে অবস্থিত টিউমারও কোনো আনুষঙ্গিক ক্ষতি ছাড়াই অপারেশন করা যায়।

ব্রেইন টিউমারের অন্যান্য চিকিৎসা :

সার্জারি বা অপারেশন ছাড়াও মেটাস্ট্যাটিক বা ক্যান্সার আক্রান্ত ব্রেইন টিউমার চিকিৎসার নানারকম পদ্ধতি রয়েছে। যেমন:

কেমোথেরাপি :

কেমোথেরাপি হল মূলত একটি ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ বা চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা শরীরের অভ্যন্তরে অতি দ্রুতহারে বাড়তে থাকা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলির বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়তা করে এবং তাদের নির্মূল করে। এই ওষুধ সাধারণতঃ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলা ক্যান্সার সেল বা কোষগুলিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

যদিও কেমোথেরাপির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিয়েশন বা ক্যান্সারের অপারেশনের চাইতে আলাদা। কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি বা অপারেশন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করে। অন্যদিকে, কেমোথেরাপির ওষুধ মেটাস্টেসিস পর্যায়ে থাকা অর্থাৎ দেহের অন্যান্য অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধংস করতে সক্ষম। (আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: কেমোথেরাপি(আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন: কেমোথেরাপি)

রেডিয়েশন থেরাপি :

রেডিয়েশন থেরাপি হল এমন এক ধরণের ক্যান্সার চিকিৎসা যাতে ক্যান্সার সেলগুলি ধংস করার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রশ্মি প্রয়োগ করে টিউমারটি বা টিউমারগুলিকে সঙ্কুচিত করা হয়। এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রশ্মি ক্যান্সার সেলের ডি এন এ ধ্বংস করে শরীরের ক্যান্সার নির্মূল করে। ক্ষতিগ্রস্ত ডি এন এ বিশিষ্ট ক্যান্সার সেলগুলি আর বাড়তে পারেনা, ফলে তা ক্রমশঃ ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর , সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলি দেহের স্বাভাবিক নিয়মেই দেহ থেকে অপসারিত হয়ে যায়, এবং এইভাবে ক্যান্সার নির্মূল হয়।

ব্র্যাকিথেরাপি :

ব্র্যাকিথেরাপি হলো এক ধরণের রেডিয়েশন থেরাপি যাতে চালের দানার আকারের রেডিয়েশন সিড বা কণা টিউমার যেখানে অবস্থান করে, সেই অংশে একটি সরু সূঁচের মাধ্যমে স্থাপন করা হয়। এই প্রণালী আল্ট্রাসাউন্ড ইমেজিং পদ্ধতির সাহায্যে করা হয়। এই রেডিয়েশন কণাগুলি থেকে দীর্ঘ সময় ধরে আক্রান্ত অংশে মৃদু ক্ষমতা সম্পন্ন বিকিরণ হতে থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর এই কণাগুলি থেকে বিকিরণ হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বিকিরণ বন্ধ হয়ে গেলেও এই কণাগুলি শরীর থেকে অপসারণ করার প্রয়োজন হয়না।

স্টিরিওট্যাকটিক রেডিও সার্জারি :

স্টিরিওট্যাকটিক রেডিও সার্জারি (SRS) হল একধরণের অত্যাধুনিক রেডিও সার্জারি। এই পদ্ধতিতে মাল্টি ডাইমেনশনাল ইমেজিং ব্যবহার করে ক্যান্সার আক্রান্ত টিউমারটির ওপর উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রেডিয়েশন বীম ফেলা হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি আশেপাশের কোনো অংশের ক্ষতি না করে বা অন্যান্য সুস্থ স্বাভাবিক কোষের ওপর প্রভাব বিস্তার না করে শুধুমাত্র ক্যানসার আক্রান্ত টিউমারটির ওপর প্রতিক্রিয়া করতে সক্ষম।

ইমিউনোথেরাপি

ইমিউনোথেরাপি বা বায়োলজিক্যাল থেরাপি হল এক উন্নত ধরণের ক্যান্সারের চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটিয়ে শরীরকে ক্যান্সারের সাথে লড়ার উপযোগী করে তোলা হয়, যাতে তা নিজেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। ইমিউনথেরাপিতে দেহে তৈরী হওয়া নিজস্ব উপাদান অথবা গবেষণাগারে তৈরী উপাদান ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়।

ধন্যবাদ পোস্টটি গুরুত্ব সহকারে এতক্ষণ পড়ার জন্য। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে পাশে থাকবেন । ধন্যবাদ আবারো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *